Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রকল্পের নাম
এলাজিইডি
বিস্তারিত

সামগ্রিক উন্নয়ন বলতে একটি দেশের বা অঞ্চলের অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানব সম্পদের উন্নয়নকেও বুঝায়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই অর্ধেক জনসংখ্যাকে উন্নয়ন কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাই নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এই অংশগ্রহণ সুবিধাভোগী হিসেবে নয়, হতে হবে অংশীদারিত্বমূলক। আর এটা করতে পারলে উন্নয়নের পাশাপাশি অর্জিত উন্নয়ন হবে সুসংহত।

নারী অথবা পুরুষ হচ্ছে কোনও ব্যক্তির লিঙ্গগত পরিচয়। মানুষ হচ্ছে তার সর্বজনীন পরিচয়। তাই নারীকে নারী হিসেবে নয়, ভাবতে হবে একজন মানুষ হিসেবে। দিতে হবে সমান মর্যাদা, কাজের সমান অধিকার। এই প্রেক্ষাপটে নারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, জন্মস্থান ও নারী-পুরুষ ভেদে বৈষম্য তৈরী না-করার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের নারীরা শুধু “নারী” নয়, তাদের সর্বজনীন পরিচয় হচ্ছে ‘‘মানুষ’’ হিসেবে।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে নির্যাতিত ও অবহেলিত নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে ঘোষণা করে ‘‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’’, যার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা। জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংস্থাভিত্তিক এলাকা চিহ্নিত করে তৈরি করে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এলজিইডিতে তৈরী করা হয় জেন্ডার সমতা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা। গ্রাম ও নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য কাজের সুযোগ তৈরী করে বাংলাদেশ সরকারের দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং জেন্ডারকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। গঠন করা হয় জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরাম। আর এভাবেই জেন্ডার বিষয়টিকে এলজিইডিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়।

জেন্ডার ও উন্নয়নে এলজিইডি

১৯৮৪ সালে পল্লীপূর্ত কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি) আত্মপ্রকাশ করে। এরপরে ১৯৯২ সালে সৃষ্টি হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এলজিইডি। শুরুতে এলজিইডির কার্যক্রম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা বিস্তৃত হয় নগর উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এভাবে তিনটি সেক্টরের মাধ্যমে দেশের স্থানীয় পর্যায়ের অবকাঠামো বিনির্মাণে ভূমিকা রেখে চলেছে এলজিইডি। এলজিইবি হিসেবে উন্মেষের পর থেকেই উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগী হয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। অবকাঠামো উন্নয়নের তিনটি সেক্টরেই যা আজ বি¯তৃত হয়েছে।

জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এলজিইডি

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পুরুষের সঙ্গে একই সারিতে নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে মহিলাদের স্বাবলম্বী করা এবং নারীর ক্ষমতায়নে নেয়া নানামুখী পদক্ষেপÑ এসব কার্যক্রমকে টিকিয়ে রাখতে এলজিইডি সচেষ্ট হয়েছে জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে। আর এ-লক্ষ্যে ২০০০ সালে তৈরী করা হয় জেন্ডার উন্নয়ন ফোরাম। এলজিইডির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে জেন্ডারকে মূলধারায় আনতে, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং জেন্ডার সংক্রান্ত নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে শুদ্ধ চর্চার জন্য একটি প্লাটফরম তৈরীর উদ্দেশ্যে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় এই ফোরাম। সাধারণভাবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে যে কোনও সময় বৈঠকে বসতে পারে।

এলজিইডির জেন্ডার সমতা কৌশল বাস্তবায়ন অগ্রগতি

সূচনালগ্ন থেকে এলজিইডি অবকাঠামো উন্নয়নে নারীদের সম্পৃক্ত করলেও মূলতঃ তা ছিলো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের দারিদ্র্য কমিয়ে আনার প্রয়াশ। এরপর এলজিইডি মনযোগী হয় নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’’ ঘোষণার পর এলজিইডি দৃষ্টি ফেরায় জেন্ডারসমতাকরণের দিকে। দারিদ্র্য হ্রাসকরণের পাশাপাশি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, নারীকে মানবসম্পদে পরিণত করা, নেতৃত্ব বিকাশ ও ক্ষমতায়ন, এক কথায় নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন করে জেন্ডার বৈষম্য কমিয়ে আনাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। পল্লী, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদÑ অবকাঠামো উন্নয়নের এই তিনটি সেক্টরেই বিভিন্ন প্রকল্পে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসকল ক্ষেত্রে ২০১১-২০১২ অর্থবছরের অগ্রগতি নিচে দেয়া হলো Ñ

১। কর্মসংস্থান: অবকাঠামো উন্নয়নে নারীরাও যাতে কাজের সুযোগ পায় এজন্য চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল (এলসিএস) গঠন করে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য অবকাঠামো, যেমনÑ গ্রামীণ সড়ক এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন, মার্কেট শেড, পাইপ কালভার্ট ও ইউ-ড্রেন নির্মাণ কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করে স্বল্প মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়াও ঠিকাদারের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণেও নারীরা যাতে সমমজুরীতে কাজের সুযোগ পায়, সে বিষয়ে প্রকল্প থেকে ঠিকাদারগণকে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরের পল্লী, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ও বৃক্ষরোপণে ১৪,৩২,৩৮৩ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে ১১,৪৮,৬১৩ জন; পানি সম্পদ সেক্টরে ৮৩,৮৭৩ জন এবং নগর উন্নয়ন সেক্টরে ১,৯৯,৮৯৭ জন নারী আছেন।

২। আত্ম-কর্মসংস্থান: দুঃস্থ নারী, প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের কাজের সুযোগ করে দেয়া সম্ভব হয় না এবং একই সঙ্গে স্বল্প মেয়াদে কাজ পাওয়া নারীরা প্রকল্পশেষে যাতে আবার আগের অবস্থায় ফিরে না যায় সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্পে নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মূলতঃ দু-ভাবে আত্ম-কর্মসংস্থানের পথ তৈরী করা হয়। প্রত্যক্ষ আত্ম-কর্মসংস্থানের মধ্যে রয়েছে নারীদের সংগঠিত করে দল গঠন, সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অথবা সম্পদে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে। আর পরোক্ষ কার্যμমের মধ্যে রয়েছে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত কোনও সংস্থার কাছে হস্তান্তর। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৪,৫৭,২২১ জন নারী ৩২,৮২,৯৫,০৬০ টাকা সঞ্চয় করে এবং ৪৫,৫৩৮ জন নারী নিজস্ব সঞ্চয় তহবিল অথবা প্রকল্পের অনুদান হিসেবে ২১৭,১৭,৮৩,৮৩০ টাকা ঋণ গ্রহণ করে।

৩। মানবসম্পদ উন্নয়ন: দুঃস্থ নারীরা সমাজের তথা দেশের বোঝাÑ প্রচলিত এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তাদেরকে মানবসম্পদে পরিণত করতে প্রকল্প থেকে দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক সচেতনতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা, নেতৃত্ব বিকাশ, সংগঠন ও ব্যবসা ব্যবস্থপনা ইত্যাদি। এছাড়া নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সঠিক কাজটি খুঁজে নিতে এবং তাঁরা যাতে দক্ষতার সঙ্গে পণ্য উৎপাদন ও তা সঠিক মূল্যে বিপণন করতে পারেন সে জন্য রয়েছে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ। রয়েছে কর্মসংস্থান পাওয়া নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩৮৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং ১,৩০,১৬৮ উপকারভোগীকে কারীগরী ও জীবনমান উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

৪। ব্যবসা সহায়ক সুবিধা: আমাদের দেশের নারীরা সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদিত পণ্য হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন না। এতে পণ্যের বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের আওতায় দুঃস্থ নারীসহ অন্যান্য নারী, যারা পণ্য উৎপাদন করে থাকেন, তাঁদের পণ্য যাতে সহজেই বাজারে বিপণন করা যায় সে সুযোগ তৈরী করতে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ হাট-বাজারে এবং নগর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরসভা সুপার মার্কেটে নারী বিপণন কেন্দ্র (উইমেন্স মার্কেট সেকশন) প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। এসব বিপণন কেন্দ্রে একাধিক দোকান তৈরী করে তা নারী ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়া হয়, যাতে একজন নারীর মধ্যে সত্যিকার ব্যবসায়ীক মনোভাব গড়ে ওঠে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে ১০৫টি মহিলা বিপণী কেন্দ্রে ৩৯৫ টি দোকান এবং নগর উন্নয়ন সেক্টরে ৩টি মহিলা বিপণী কেন্দ্রে ১৫ টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ওয়ার্ড
সমগ্র্র্র ওয়ার্ড
প্রকল্পের ধরণ
এতিমখানা
label.Details.title

সামগ্রিক উন্নয়ন বলতে একটি দেশের বা অঞ্চলের অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানব সম্পদের উন্নয়নকেও বুঝায়। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই অর্ধেক জনসংখ্যাকে উন্নয়ন কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাই নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এই অংশগ্রহণ সুবিধাভোগী হিসেবে নয়, হতে হবে অংশীদারিত্বমূলক। আর এটা করতে পারলে উন্নয়নের পাশাপাশি অর্জিত উন্নয়ন হবে সুসংহত।

নারী অথবা পুরুষ হচ্ছে কোনও ব্যক্তির লিঙ্গগত পরিচয়। মানুষ হচ্ছে তার সর্বজনীন পরিচয়। তাই নারীকে নারী হিসেবে নয়, ভাবতে হবে একজন মানুষ হিসেবে। দিতে হবে সমান মর্যাদা, কাজের সমান অধিকার। এই প্রেক্ষাপটে নারীদের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সবক্ষেত্রে সমান সুযোগ এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, জন্মস্থান ও নারী-পুরুষ ভেদে বৈষম্য তৈরী না-করার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের নারীরা শুধু “নারী” নয়, তাদের সর্বজনীন পরিচয় হচ্ছে ‘‘মানুষ’’ হিসেবে।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে নির্যাতিত ও অবহেলিত নারী সমাজের ভাগ্যোন্নয়নে ঘোষণা করে ‘‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’’, যার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় জাতীয় কর্মপরিকল্পনা। জাতীয় কর্মপরিকল্পনার আলোকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় সংস্থাভিত্তিক এলাকা চিহ্নিত করে তৈরি করে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা। স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এলজিইডিতে তৈরী করা হয় জেন্ডার সমতা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা। গ্রাম ও নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য কাজের সুযোগ তৈরী করে বাংলাদেশ সরকারের দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং জেন্ডারকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। গঠন করা হয় জেন্ডার ও উন্নয়ন ফোরাম। আর এভাবেই জেন্ডার বিষয়টিকে এলজিইডিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়।

জেন্ডার ও উন্নয়নে এলজিইডি

১৯৮৪ সালে পল্লীপূর্ত কর্মসূচি থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো (এলজিইবি) আত্মপ্রকাশ করে। এরপরে ১৯৯২ সালে সৃষ্টি হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বা এলজিইডি। শুরুতে এলজিইডির কার্যক্রম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তা বিস্তৃত হয় নগর উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এভাবে তিনটি সেক্টরের মাধ্যমে দেশের স্থানীয় পর্যায়ের অবকাঠামো বিনির্মাণে ভূমিকা রেখে চলেছে এলজিইডি। এলজিইবি হিসেবে উন্মেষের পর থেকেই উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে উদ্যোগী হয় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। অবকাঠামো উন্নয়নের তিনটি সেক্টরেই যা আজ বি¯তৃত হয়েছে।

জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে এলজিইডি

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পুরুষের সঙ্গে একই সারিতে নারীদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে মহিলাদের স্বাবলম্বী করা এবং নারীর ক্ষমতায়নে নেয়া নানামুখী পদক্ষেপÑ এসব কার্যক্রমকে টিকিয়ে রাখতে এলজিইডি সচেষ্ট হয়েছে জেন্ডার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে। আর এ-লক্ষ্যে ২০০০ সালে তৈরী করা হয় জেন্ডার উন্নয়ন ফোরাম। এলজিইডির প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে জেন্ডারকে মূলধারায় আনতে, বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং জেন্ডার সংক্রান্ত নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন ও এসব বিষয়ে শুদ্ধ চর্চার জন্য একটি প্লাটফরম তৈরীর উদ্দেশ্যে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত হয় এই ফোরাম। সাধারণভাবে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিশেষ প্রয়োজনে যে কোনও সময় বৈঠকে বসতে পারে।

এলজিইডির জেন্ডার সমতা কৌশল বাস্তবায়ন অগ্রগতি

সূচনালগ্ন থেকে এলজিইডি অবকাঠামো উন্নয়নে নারীদের সম্পৃক্ত করলেও মূলতঃ তা ছিলো কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীদের দারিদ্র্য কমিয়ে আনার প্রয়াশ। এরপর এলজিইডি মনযোগী হয় নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’’ ঘোষণার পর এলজিইডি দৃষ্টি ফেরায় জেন্ডারসমতাকরণের দিকে। দারিদ্র্য হ্রাসকরণের পাশাপাশি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ, নারীকে মানবসম্পদে পরিণত করা, নেতৃত্ব বিকাশ ও ক্ষমতায়ন, এক কথায় নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন করে জেন্ডার বৈষম্য কমিয়ে আনাই এর মূখ্য উদ্দেশ্য। পল্লী, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদÑ অবকাঠামো উন্নয়নের এই তিনটি সেক্টরেই বিভিন্ন প্রকল্পে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসকল ক্ষেত্রে ২০১১-২০১২ অর্থবছরের অগ্রগতি নিচে দেয়া হলো Ñ

১। কর্মসংস্থান: অবকাঠামো উন্নয়নে নারীরাও যাতে কাজের সুযোগ পায় এজন্য চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল (এলসিএস) গঠন করে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য অবকাঠামো, যেমনÑ গ্রামীণ সড়ক এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন, মার্কেট শেড, পাইপ কালভার্ট ও ইউ-ড্রেন নির্মাণ কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করে স্বল্প মেয়াদে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়াও ঠিকাদারের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণেও নারীরা যাতে সমমজুরীতে কাজের সুযোগ পায়, সে বিষয়ে প্রকল্প থেকে ঠিকাদারগণকে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরের পল্লী, নগর ও ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ও বৃক্ষরোপণে ১৪,৩২,৩৮৩ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে ১১,৪৮,৬১৩ জন; পানি সম্পদ সেক্টরে ৮৩,৮৭৩ জন এবং নগর উন্নয়ন সেক্টরে ১,৯৯,৮৯৭ জন নারী আছেন।

২। আত্ম-কর্মসংস্থান: দুঃস্থ নারী, প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের কাজের সুযোগ করে দেয়া সম্ভব হয় না এবং একই সঙ্গে স্বল্প মেয়াদে কাজ পাওয়া নারীরা প্রকল্পশেষে যাতে আবার আগের অবস্থায় ফিরে না যায় সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্পে নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মূলতঃ দু-ভাবে আত্ম-কর্মসংস্থানের পথ তৈরী করা হয়। প্রত্যক্ষ আত্ম-কর্মসংস্থানের মধ্যে রয়েছে নারীদের সংগঠিত করে দল গঠন, সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অথবা সম্পদে প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে। আর পরোক্ষ কার্যμমের মধ্যে রয়েছে আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে উপযুক্ত কোনও সংস্থার কাছে হস্তান্তর। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৪,৫৭,২২১ জন নারী ৩২,৮২,৯৫,০৬০ টাকা সঞ্চয় করে এবং ৪৫,৫৩৮ জন নারী নিজস্ব সঞ্চয় তহবিল অথবা প্রকল্পের অনুদান হিসেবে ২১৭,১৭,৮৩,৮৩০ টাকা ঋণ গ্রহণ করে।

৩। মানবসম্পদ উন্নয়ন: দুঃস্থ নারীরা সমাজের তথা দেশের বোঝাÑ প্রচলিত এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে তাদেরকে মানবসম্পদে পরিণত করতে প্রকল্প থেকে দেয়া হয় বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক সচেতনতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, জেন্ডার বিষয়ক সচেতনতা, নেতৃত্ব বিকাশ, সংগঠন ও ব্যবসা ব্যবস্থপনা ইত্যাদি। এছাড়া নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সঠিক কাজটি খুঁজে নিতে এবং তাঁরা যাতে দক্ষতার সঙ্গে পণ্য উৎপাদন ও তা সঠিক মূল্যে বিপণন করতে পারেন সে জন্য রয়েছে আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ। রয়েছে কর্মসংস্থান পাওয়া নারীদের কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩৮৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং ১,৩০,১৬৮ উপকারভোগীকে কারীগরী ও জীবনমান উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

৪। ব্যবসা সহায়ক সুবিধা: আমাদের দেশের নারীরা সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উৎপাদিত পণ্য হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন না। এতে পণ্যের বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের আওতায় দুঃস্থ নারীসহ অন্যান্য নারী, যারা পণ্য উৎপাদন করে থাকেন, তাঁদের পণ্য যাতে সহজেই বাজারে বিপণন করা যায় সে সুযোগ তৈরী করতে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ হাট-বাজারে এবং নগর উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরসভা সুপার মার্কেটে নারী বিপণন কেন্দ্র (উইমেন্স মার্কেট সেকশন) প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে। এসব বিপণন কেন্দ্রে একাধিক দোকান তৈরী করে তা নারী ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেয়া হয়, যাতে একজন নারীর মধ্যে সত্যিকার ব্যবসায়ীক মনোভাব গড়ে ওঠে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে পল্লী উন্নয়ন সেক্টরে ১০৫টি মহিলা বিপণী কেন্দ্রে ৩৯৫ টি দোকান এবং নগর উন্নয়ন সেক্টরে ৩টি মহিলা বিপণী কেন্দ্রে ১৫ টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ডাউনলোড